পত্রিকার শহর কুষ্টিয়া

এনামুল হক রাসেল এনামুল হক রাসেল

সম্পাদক, দ্য বিডি রিপোর্ট ২৪ ডটকম

প্রকাশিত: ৫:২৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০১৯
পত্রিকার শহর কুষ্টিয়া
Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জনপদ কুষ্টিয়া। অন্যদিকে উন্নয়নশীল জেলা হিসাবেও দেশের মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে কুষ্টিয়ার। কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে রয়েছে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির লীলাভূমি। এই কারণেই কুষ্টিয়াকে বলা হয় ‘‘সাংস্কৃতিক রাজধানী’’।

শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিভিন্ন ঐতিহ্যের শহর কুষ্টিয়া হলেও এবার জেলায় অর্ধশতাধিক পত্রিকার অনুমোদন থাকায় পরিনত হয়েছে পত্রিকার শহর কুষ্টিয়া হিসেবে। শুধু তাই নয়, জেলাজুড়ে হুলুদ সাংবাদিকতায় ছেঁয়ে গেছে। এর কারণে কুষ্টিয়ায় পেশাদার সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা করা দায় হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে এখানে নবীন ও প্রবীন সাংবাদিকদের মাঝে কেউ কাউকে কোনো ছাড় নয়, তাদের মধ্যেও রয়েছে তুমুল প্রতিযোগিতা।

দৈনিক, সাপ্তাহিক ও ১টি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা মিলে অনুমোদন রয়েছে ৫৩টি পত্রিকা। ৫৩টি পত্রিকার অনুমোদন থাকলেও এখন প্রতিদিন প্রকাশিত হয় ১০থেকে ১২টি পত্রিকা। আর বাকি পত্রিকা গুলো প্রকাশিত হওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা চোখে পড়ে না। এত গুলী পত্রিকা অনুমোদনের ক্ষেত্রে জেলার মানুষের একদিকে রয়েছে যেমন নানান সমলোচনা। অন্যদিকে জেলায় কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। পেশার প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে।

দীপ্ত টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি দেবেশ চন্দ সরকার বলেন, এখানে নবীন ও প্রবীন সাংবাদিকদের মাঝে কেউ কাউকে কোনো ছাড় নয়, তাদের মধ্যেও রয়েছে তুমুল প্রতিযোগিতা। পত্রিকা সংখ্যা বেশি হওয়ায় এর সুযোগে কিছু ভোইফোর কার্ড ধারী লোকজন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান ও কিছু ব্যাক্তিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও এখানে প্রতিদিনের। এতে সুনাম ক্ষীন্য হচ্ছে পেশাদার সাংবাদিকদের। এমন অবস্থা চলতে থাকলে এই জেলায় মেধাবীরা এই পেশায় আসবে না। ক্ষতির মুখে পড়বে মফসল সাংবাদিকতা। যার জন্য সৃষ্টি আজকের সাংবাদিকতা,পত্রিকা সংবাদপত্রের পথিকৃৎ ও দ্বিকপাল কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের স্মৃতি বিজড়িত এই জেলা, পদ্মা, গড়াই, কালিগঙ্গা বিধৌত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাউল শিরোমনি লালন শাহ, কালজয়ী সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন,কবি আজিজুর রহমান, বিপ্লবী বাঘা যতীন, বিচারপতি ড.রাধা বিনোদপালসহ শত মনিষীর পদচারণায় কুষ্টিয়ার মাটি ধন্য। ১৯৭১ সালে কুষ্টিয়া জেলা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার। বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী স্থাপিত হওয়ায় এ জেলার মর্যাদা বাঙালী জাতির কাছে চিরস্মরণযোগ্য।

সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ইমাম মেহেদী বলেন, বিশ্বসাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কুষ্টিয়া- কুমারখালী শিল্পশহর হিসেবে পরিচিত। কুষ্টিয়া শুধু বাংলা সাহিত্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত না, পলাশী থেকে মুজিবনগর এবং বতর্মান পযর্ন্ত সকল আন্দোলন, সংগ্রাম ও ইতিহাস-ঐতিহ্যে কুষ্টিয়ার গণমাধ্যেমর ভূমিকা রয়েছে। একটি দেশের ইতিহাস বিনির্মানে সেই দেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ঠিক একই ভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে কুষ্টিয়া জেলা পত্রিকার শহরে রুপান্তিত হয়েছে। যা একদিকে যেমন আমাদের গর্ব অন্যদিকে জেলার উন্নয়ন হিসেবেই দেখতে হয়। তবে বেশি পরিমান পত্রিকা প্রকাশিত হলে অযোগ্য লোক বা যে কেউ সাংবাদিক হওয়ার প্রবণতা থাকে।

বাংলাভিশন টেলিভিশন ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হাসান আলী বলেন, অবিভক্ত ভারত বর্ষে বৃটিশদের স্টিমরুল দু:শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করা বাংলা গণমাধ্যম বা সাংবাদিকতার পথিকৃত কাঙাল হরিনাথের জেলা কুষ্টিয়া। সাংস্কৃতিক রাজধানীখ্যাত পত্রিকার শহর কুষ্টিয়া পূর্বসুরীদের পথ পরিক্রমায় প্র্রায় অর্ধশতাধিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় এখানে যা দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে বিরল। সবগুলি পত্রিকায় গড়ে ৩জন করে সংবাদকর্মী

সস্পৃক্ত থাকলেও তার সংখ্যা দাড়ায় দুই শাতাধিক। এছাড়া উল্লেখযোগ্য জাতীয় দৈনিক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত আছেন আরও প্রায় ৫০ জনের মতো। এ সংখ্যা যৌকিক বিবেচনায় সঠিক হলেও কার্যত: সংখ্যার দিক থেকে নেহায়েত কম নয়। কিন্তু কথা হলো- এই বিপুল সংখ্যক সংবাদ মাধ্যম ও সংবাদ কর্মী থাকলেও কার্যত: এটা সংখ্যাগত আধিক্যই বটে। প্রকৃতপক্ষে গুনগত আধিক্যে অতিব দৈন্যতার মাঝে আছেন এখানকার গনমাধ্যম গুলো যা দেশ, জাতি বা সমাজের কাছে অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। এই বিদ্যমান পরিস্থিতির উত্তরোনে সংশ্লিষ্ট এসব গণমাধ্যমে যারা কর্ণধারের আসন দখল করে বসে আছেন তারা কেউই এর দায় এড়াতে পারেন না। এর চেয়ে বরং বলতে হয়- ‘দুষ্টু ষাঁড়ের চেয়ে খালি গোয়ল উত্তম’ এমনটাই বলেন তিনি।

কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব-কেপিসির সভাপতি ও দৈনিক আরশীনগর পত্রিকার সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, ১৮৬১ সাল যখন বাংলাদেশে একটি পত্রিকাও ছিলো না। তখন অবিভাত্ত বাংলা পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম সেটি ছিল ভারতের একটি অংশ। সেই সময় কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে কাঙাল হরিনাথ মজুমদার গ্রামবার্তা নামে একটি পত্রিকা প্রথমে হাতে লেখে পরে কলকাতা থেকে ছাপিয়ে তিনি এ অঞ্চলে প্রকাশ করতেন। সেই পত্রিকাটিই বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র। তিনি দুরগম দুরসময় সাংবাদিকতার মতবিরুদ্ধ পরিবেশের এসময় বিটিশদের শাসন আমলে সাংবাদপত্র প্রকাশের কোনো প্রকাশনা কিনবা সেই রকম কোনো পরিবেশ না থাকা সত্তেও এই জনপদে সংবাদপত্র প্রকাশ হয়েছে। আজকে সাংবাদিকতার সোনানী দিন। তথ্য প্রযুক্তির জয়জয়কার। সারা বিশে^র সাথে বাংলাদেশও এগিয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে সংবাদপত্র এ অঞ্চলে সংখ্যাটা বেশি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ দুরসময়ে দুরদিনে যদি সংবাদপত্র এ অঞ্চলে প্রকাশ হয়ে থাকে আর এখন গণমাধ্যমের সুদিন এবং সুবাতাস বইছে। অবাদ তথ্য প্রবাহ ঘরে বসেই সব তথ্য পাওয়া যায়। এত গুলি পত্রিকা প্রকাশে আমি খারাপ কিছু মনে করি না। তবে সংবাদপত্রের মানের দিক থেকে গুনগত যে মান সেই জায়গাটিতে আমরা সংকৃত। কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের লিখনীর যে সত্যতা ও সাহসীকতা এবং জনগণের পক্ষ নিয়ে যে লিখনী আজকের সময় সেটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা সাংবাদিকতার পেশায় দেখছি পত্রিকা গুলো একটি দায় সারাভাবে সংবাদপত্র প্রকাশ হচ্ছে এবং দায়িত্বহীনতার সাথে পত্রিকার পাতা ভোরে প্রকাশ করে সকালে পাঠকের কাছে পাঠাচ্ছি। সংবাদপত্র ব্যবসা নয়,এটি একটি সেবা সেই জায়গা থেকে সরে এসে কিছু অর্থের মালিকরা ও কিছু অসাংবাদিক পত্রিকার মালিক সেঁজে তার অবৈধ সম্পদ গুলোকে ঢাকতে পত্রিকাটিকে পাহারাদার ও হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার অবৈধ সম্পদ গুলোকে রক্ষা করতে ও তার যারা শক্র তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সাংবাদিক গুলোকে তারা ব্যবহার করছে।

পাঠকের মতামতের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।