ধর্ষণ কমাতে কি ‘হালাল পতিতালয়’!

এনামুল হক রাসেল এনামুল হক রাসেল

সম্পাদক, দ্য বিডি রিপোর্ট ২৪ ডটকম

প্রকাশিত: ৬:১১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০১৯
Spread the love

সায়েদুল আরেফিন : শংকার ডংকা বাজছে মা-বা, ভাই-বোন, দাদা-দাদি সবার বুকের গহীনে। গোটা বাংলাদেশের অভিভাবকরা মারাত্মক দুশ্চিনায় দিনাতিপাত করছেন। গত কয়েকদিন সোশ্যাল মিডিয়ার পোষ্ট দেখে মনে হচ্ছে পশুরুপি বিকৃত রুচির মানুষেরা বাংলাদেশের শিশু আর নারীদের উপর হামলে পড়েছে। এর ফলে অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়া আর সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনলাইন পোর্টালের কল্যাণে সারা দেশের মানুষের মাঝে একটা ধর্ষণ বিরোধী জনমত শক্তিশালী হতে শুরু করেছে। সারা দেশে ধর্ষণের যে চিত্র তাতে যে কোন সময় জন বিস্ফোরণের আশংকা অমূলক নয়। এতে করে নির্যাতিত শিশুদের বাবা- ভাইয়েরা প্রতিবেশীদের সাথে নিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে এমন সম্ভাবনা আস্তে আস্তে প্রকট হচ্ছে। এর মাঝেই অনেকে নানাভাবে এই বিপর্যয় থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, নতুন আইন করে তাঁর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে যেমনটি হয়েছিলো এসিড সন্ত্রাস ভয়াবহ রূপ নেওয়ার সময়। কেউ বলছেন এনকাউন্টারের নামে সরাসরি ক্রসফায়ার দিতে আবার কেউ কেউ বলছেন সারা দেশে ‘হালাল পতিতালয়’ খোলার অনুমতি দিতে। এসব নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন তুমুল বিতর্ক চলছে।

মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে মিডিয়ার সাম্প্রতিক এক খবরের দিকে নজর দেওয়া যায়। খবরে বলা হয় যে, নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে মুসলিম খদ্দেরদের জন্য ধর্মীয় অনুশাসনের সীমার মধ্যে থেকে ‘হালাল পতিতালয়’ চালু হয়েছে। দেশটির রেড লাইট এলাকায় ‘হট ক্রিসেন্ট’ নামের বারটি সম্প্রতি চালু হয়েছে। হালাল ভাবে যৌন বৃত্তি চরিতার্থ করার উপায় খুঁজে বের করতে তিনজন আধুনিকমনস্ক ইমামের (ধর্মীয় নেতা) পরামর্শ নিয়েছেন বারের মালিক জনাথন সুইক।

পরামর্শ অনুযায়ী, সেখানকার পতিতাদেরকে মাদক সেবনে বাধ্য করা হবে না। ইসলামের নিয়মানুযায়ী দিনে পাঁচবার নামাজও পড়বে তারা। আর খদ্দেরদেরকেও তাদের সঙ্গে ইসলাম-সম্মত ভাবেই যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। কিন্তু বিয়ে ছাড়া নারী-পুরুষের যৌন সংসর্গ ইসলাম সম্মত হবে কিভাবে? ইমামের সঙ্গে পরামর্শ করে এরও একটা সমাধান বের করেছেন হোটেল ব্যবসায়ী জনাথন। ইসলামের শিয়া সম্প্রদায়ের মাঝে প্রাপ্তবয়স্ক যুগলের প্রণোদনার জন্য ‘মুত’আ বিয়ে’ নামের একধরনের অস্থায়ী বিয়ে প্রচলিত আছে। শিয়া সমাজে ওই ধরনের চুক্তি ভিত্তিক বিয়ে স্বীকৃত এবং ধর্মীয় আইনসিদ্ধ। হোটেলে যৌনসঙ্গী সরবরাহের ক্ষেত্রে মুতা বিয়ের (বিনোদনের জন্য বিয়ে) ওই নিয়মই অনুসরণ করা হচ্ছে।

‘মুতা বিয়ে’র ক্ষেত্রে যুগল জীবনের সময়সীমা বিয়ের আগেই ঠিক করা হয় এবং সময় পার হওয়ার পর আপনা থেকেই বিয়ের সমাপ্তি ঘটে। তবে ইচ্ছানুযায়ী পুনরায় বিয়ে করা যায় এবং অর্থ প্রদানের বিষয়টিও ঘটতে পারে, যেমনটি একজন স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকেন। হট ক্রিসেন্ট বারের হালাল পতিতাদেরকে প্রতি দুই মাস পর পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়, যাতে করে গ্রাহকরা যৌনসংসর্গের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে না এবং কেউ অপরাধ-বোধেও ভুগবে না বলেই প্রত্যাশা হোটেল মালিকের।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে মুত’আ বিয়েটা কি? এটা কীভাবে ইসলাম সম্মত হয়। যেহেতু আমাদের দেশের অধিকাংশই সুন্নি মুসলমান তাই ‘মুত’আ বিয়ে’ সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের ধারণ খুব কম, কিছু বিকৃত রুচির আলেম ছাড়া। কারণ এটা সুন্নিদের চেয়ে শিয়া মুসলিমদের মধ্যে বেশি প্রচলিত হয়ে আসছে দুনিয়া জুড়ে। ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের সুরা আন নিসা, আয়াত ২৪ এ বলা হয়েছে যে, “(হারাম) তোমাদের জন্য বিবাহিত মহিলা, তাদের ছাড়া যাদের উপর তোমাদের ডান হাত প্রসারিত। এটা আল্লাহ তোমাদের জন্য লিখেছেন। আর এই গুলো ছাড়া অন্য মহিলারা তোমাদের জন্য (হালাল), তোমরা তাদেরকে তোমাদের সম্পদের বিনিময় চাইতে পারও, বিবাহে নেওয়ার জন্য অবৈধ বীর্যপাতের জন্য নয়। আর যাদের সাথে তোমরা মুত’আ করেছ তাদেরকে সম্পদ দাও.…………..”

কিছু আলেম লোক এই ইস্তিমতাতুমকে ভোগ বা সংগম করা অর্থে নিয়েছে কিন্তু ইস্তিমতাতুম কে যদি ভোগ করা বলা হয় তবে এর অর্থ দাঁড়ায় যে যতবার ভোগ করা হবে ততবার কিছু সম্পদ দিতে হবে কারণ এরশাদ হচ্ছে ইস্তামতাতুম এর বিনিময় মোহর দিতে। সুতরাং ভোগ বা সঙ্গম অর্থ করা ননসেন্স ছাড়া কিছুই নয়। আসলে ইস্তিমতাতুম মুতা’আ শব্দের ভার্ব বা ক্রিয়া এর রূপ।

ইন্টারনেট ঘাঁটলে সবাই জানতে পারবেন যে, আহলে সুন্নার হাদিস অনুযায়ী ৬স্ট ও ৭ম হিজরিতে মুত’আ চিরকালের জন্য হারাম করা হয়েছিলো অথচ ৮ম হিজরিতে রসুল মুত’আ করার অনুমতি দিয়েছিলেন! এটা আর বাতিল করা হয়নি। মহানবীর ওফাতের পরে হযরত অমর এটা বাতিল করতে গিয়ে কাফের আখ্যায়িত হন। হযরত ওমর দাবি করেন যে, ইসলাম পূর্ব আইয়ামে জাহেলিয়াত (অজ্ঞতা, বর্বরতা, কুসংস্কার, তমসা বা অন্ধকার)সময়ের পরে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় মুত’আ বিয়েটা ছিল একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আর সম্ভাব্য এমন পরিবারের সদস্যগণ তাদের শিশুদের ইজ্জত ও জীবনের নিরাপত্তায় সরাসরি এনকাউন্টারের নামে ক্রস ফায়ারের পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা চালয়ে যাচ্ছে; যদিও এটা কোন ভালো ব্যবস্থা নয়। কিন্তু আপদ-কালীন সময়ে উন্নত দেশেও এনকাউন্টারের নামে ক্রস ফায়ারের মাধ্যমে অপরাধ দমনের ভূরি ভূরি প্রমাণ বিদ্যমান।

অপরদিকে বিজ্ঞান মনস্ক বা মুক্ত চিন্তার মানুষেরা বলছেন যে, ধর্ষকরা মানসিক ভাবেই বিকৃত রুচির। তাদের পারিবারিক নৈতিকতার শিক্ষা নেই, তাই তাদের ব্যক্তি জীবনে নেই নৈতিকতার বালাই। তাই তাঁরা যে পেশাতেই থাকুক না কেন তাদের আসল পরিচয় তাঁরা ধর্ষক। একারণে তাদের হাতে মেয়ে বা ছেলে শিশু, যুবা, বৃদ্ধা কেউ বাদ যান না। ব্রিটিশদের উপনিবেশ আমলের মত সারা দেশ জুড়ে পতিতালয় তৈরি করলেও তারা সেখানে যাবে না। তারা তাদের বিকৃত রুচি চরিতার্থে ইচ্ছে হলেই হামলে পড়বে আমাদের মেয়েদের, বোনেদের, ছেলেদের, মায়েদের উপর। এদের নিবৃত করতে দরকার কঠোর আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা আর শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে নৈতিকতার শিক্ষা বাধ্যবাধক করা সাথে পেশাগত নৈতিকতার শিক্ষা। অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে প্রয়োজনে এনকাউন্টারের নামে ক্রস ফায়ার আর সচেতনতা বৃদ্ধিতে সার্বিক সামাজিক আন্দোলন, যেমনটি হয়েছিলো হলি আরটিজানের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পরে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। হউক না আবার আরেকটি আসামাজিক আন্দোলন, এই বাংলায়, দেখুক বিশ্ব, জানুক শিখুক সবাই বাংলার এই বাংলীর কাছ থেকে।

লেখক: সায়েদুল আরেফিন

পাঠকের মতামতের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।