ডিসি যান ডিসি আসেন,সবাই বলেন নির্বাচন দেবো: অনির্বাচিত কমিটি দিয়ে চলছে কুষ্টিয়া লালন একাডেমী
এনামুল হক রাসেল এনামুল হক রাসেল
সম্পাদক, দ্য বিডি রিপোর্ট ২৪ ডটকম


নিজস্ব প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার কুৃমারখালীর ছেউড়িয়ায় অবস্থিত লালনের আখড়া বাড়ি কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে লালন একাডেমী। লালন একাডেমীর জন্ম থেকে শুরু হয় বির্তক। ঢাকায় বুদ্ধিজীবীরা লালন একাডেমী প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। কুষ্টিয়াবাসীর আন্দোলনের মুখে কুষ্টিয়ার আখড়া বাড়িতে লালন একাডেমী চালু হয়।
একাডেমির একটি বিশাল অডিটোরিয়াম রয়েছে। রয়েছে শত শত বিঘা জমি, কালিনদীর ওপরও নিয়ন্ত্রন লালন একাডেমীর। পদাধিকার বলে লালন একাডেমীর সভাপতি জেলা প্রশাসক। নিয়মানুযায়ী নির্বাচিত কমিটি দুই বছর মেয়াদে লালন একাডেমী পরিচালনা করবে। কমিটির মেয়াদর্ত্তীণ হওয়া ৪ বছর পার হয়ে গেলেও নির্বাচন নেই। ডিসি বদলী হন নতুন ডিসি দায়িত্ব নেন কিন্তু নির্বাচনের নাম কেউ মুখে আনেন না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কমিটিতে থাকা লালন একাডেমীর দুই সদস্য বনে গেছেন হর্তা কর্তা বিধাতা।
সূত্র বলছে ওই দুই সদস্য জেলা প্রশাসকদের নির্বাচন করার ব্যাপারে নিরুসাহিত করেন। তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ লালন একাডেমীর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। নির্বাচনে রেজানুর রহমান খান চৌধুরী মুকুল সাধারণ সম্পাদক পদে জয়লাভ করেন। যুগ্ম সম্পাদক পদে জয়লাভ করেন সেলিম হক। এ্যাড শহিদুল ইসলাম নির্বাহী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর এতোবেশী প্রতাপশালী হয়ে ওঠে সেলিম হক যে তৎকালীন ডিসি সৈয়দ বেলাল হোসেন তার কথায় নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রেজানুর রহমান খান চৌধুরী মুকুলকে অসুস্থ্য দেখিয়ে তার জায়গায় স্থলাভিযুক্ত করেন যুগ্ম সম্পাদক সেলিম হককে। নির্বাচনের ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রেজানুর রহমান খান চৌধুরী মুকুলর পদ শূণ্য হয়। ২০১৫ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ হলে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সভাপতি ও এনডিসি সদস্য সচিবের দায়িত্ব পান। নির্বাহী সদস্য রাখা হয় নির্বাচিত ওই কমিটির দুই সদস্য সেলিম হক ও শহিদুল ইসলামকে। তারা নিজের সম্পত্তির মতো ব্যবহার শুরু করেন লালন একাডেমীর সকল সম্পত্তি।
সূত্র জানায়, লালন একাডেমীতে দুই বার অনুষ্ঠান হয়। দৌলপূর্ণিমার সাধু সঙ্গ ও লালনের মৃত্যুবার্ষিকী। এই দুই অনুষ্ঠানে মাঠের ইজারা দেয় লালন একাডেমী।
অনির্বাচিত কমিটির হাতে এ পর্যন্ত মাঠ ইজারা বাবাদ এসেছে ১ কেটি ২০ লাখ বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে, পার্কিং ইজারা বাবাদ এসেছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ,এছাড়া দানবাক্স থেকে এসেছে ৪৮ লাখ টাকা। প্রতিবছর দুই বার কালী নদীতে মাছ ধরার জন্য টিকিট দেয়া হয়। যা থেকে ৪ বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকা এসেছে লালন একাডেমীর ফান্ডে। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হলো এসকল টাকা আয় হলেও কোন চর্চা নেই লালনের। নেই কোন গবেষণা কেন্দ্র। নামমাত্র একটি লাইব্রেরী রয়েছে যেখানে সকলের প্রবেশাধিকার নেই। এছাড়া সদস্য রেনুয়াল বাবদ একটি মোটা অংকের টাকা লালন একাডেমীর ফান্ডে জমা হচ্ছে। দৃশ্যমান এসব আয়ের বাইরে রয়েছে অদৃশ্য আয়। বিভিন্ন জেলায় লালন একাডেমী যে সকল অনুষ্ঠান করে তার সিংহ ভাগ টাকা সেলিম হক ও শহিদুল ইসলামের পকেটস্থ হয়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ লালন একাডেমীকে একটি ডিম পাড়া হাস হিসেবে নিয়েছে সেলিম হক শহিদুল ইসলাম। তারা মূলত লালন একাডেমীর অর্থ আত্মাসাত করে একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে একাডেমীকে পরিণত করার চেষ্টা করছে। কোন বাউলের জায়গা নেই লালন একাডেমীতে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার সুজন রহমান বলেন, লালন একাডেমীর নির্বাচনে দায়িত্ব ডিসি সাহেবের। তিনি কেন নিব্র্াচন দেন না এটা তিনি জানেন। আর লালন একাডেমী সকল অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমীকে এড়িয়ে চলেন।
লালন একাডেমীর সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন, বর্তমানে এডহক কমিটিতে যারা রয়েছে তাদের সাথে কথা বলে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো।