কোন পদক্ষেপই কাজে আসছে না, কুষ্টিয়ায় বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুর বিস্তার
এনামুল হক রাসেল এনামুল হক রাসেল
সম্পাদক, দ্য বিডি রিপোর্ট ২৪ ডটকম


নিজস্ব প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করার পরও ঠেকানো যাচ্ছেনা এডিস মশাকে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে দৌলতপুর উপজেলার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে গত রবিবার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক মো: আসলাম হোসেন।
ভেড়ামারায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মিনা খাতুন নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়
ভেড়ামারায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মিনা খাতুন (২৫) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। সে ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের কাজিহাটা গ্রামের রায়হান আলীর স্ত্রী। মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর খলিষাকুন্ডি ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জোসনা খাতুন (৫৫) নামে এক নারীর মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুরুল আমীন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি গত শুক্রবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ধরমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাকির হোসাইন জানান, নিজ বাড়িতেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মিনা খাতুন ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। সেখানেই ৩ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৭ বছর আগে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও সে নিঃসন্তান ছিলেন। এর আগে ডেঙ্গু জরে আক্রান্ত হয়ে দৌলতপুরে জোসনা খাতুন নামে এক নারী রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
অন্যদিকে দৌলতপুর উপজেলায় নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেও কমছে না ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। শুধুমাত্র উপজেলার আড়িয়া ও খলিসাকুন্ডি এই দুই ইউনিয়নেই এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক। বাদ যাচ্ছেন না স্বাস্থ্য সেবার কাজে নিয়োজিত ব্যাক্তিরা।
এডিস মশা নিধন ও আক্রান্তদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার কাজ করার সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আনছারী বিপ্লব ও স্বাস্থ্যকর্মী ওয়ালিউর রহমান। তারা বর্তমানে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধিন।
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ উপজেলার সর্ব প্রথম আড়িয়া ইউনিয়নে ছাতারপাড়া গ্রামের ডেঙ্গু রোগি সনাক্ত হয়। বর্তমানে এ গ্রামেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬২ জনে দাড়িয়েছে। রোগের কারণ অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রন ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর ৪ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল ছাতারপাড়া গ্রাম কাজ করে গেছেন। সব মিলিয়ে আড়িয়া ইউনিয়নেই ৮০ জন ডেঙ্গু রোগিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া পার্শ¦বর্তি খলিষাকুন্ডি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে সনাক্ত করা হয়েছে আরো প্রায় ২৫ জনকে। এছাড়াও উপজেলার রিফায়েতপুর, শিতলাইপাড়া, মহিষকুন্ডি গ্রামে প্রায় ১০ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
দৌলতপুর উপজেলার ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে গত রবিবার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক মো: আসলাম হোসেন। তিনি সিভিল সার্জনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তার অসহযোগিতা ও কাজে নিস্কৃয়তা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে আরো বেশি অসুস্থ্য করে তুলছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে যারা কাজ করছেন তারাও রয়েছেন শংকার মধ্যে। ডেঙ্গু রোগিদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও রোগি সনাক্তকরণের কাজ করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন ছাতারপাড়া কমিউিনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইসিপি ওয়ালিউর রহমান। তিনিও গত বুধবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছেন। এছাড়াও শনিবার স্থানীয় আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আনছারী বিপ্লব ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ ডেঙ্গু প্রতিরোধে তিনি কাজ করছিলেন। রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ডেঙ্গু রোগি শনাক্তে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বয়ে টিম কাজ করছেন।
ঔষধ বিতরন করছেন আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আনছারী বিপ্লব
এদিকে আড়িয়া ও খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের ডেঙ্গু আক্রান্ত গ্রামগুলোতে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি ‘স্বপ্নছায়া’ নামে স্থানীয় একটি সংগঠন। তাশফিন আব্দুল্লাহের নেতৃত্বে সংগঠনের প্রায় ৩০ জন সদস্য গত ৩ সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত গ্রামগুলোর পাড়ায় পাড়ায় মশক নিধন, লার্ভা ধ্বংশ করতে বিষ স্প্রে ছিটানো, পরিস্কার পরিচ্ছনতা কার্যক্রম ও ডেঙ্গু রোগিদের চিকিৎসার সহায়তা প্রদান করে আসছে।
স্বপ্নছায়া’ নামে স্থানীয় একটি সংগঠন ডেঙ্গু ও এডিস মশা নিধনে গ্রামে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করছে
স্বপ্নছায়া সংগঠনের নেতা তাশফিন আব্দুল্লাহ দ্যা বিডি রিপোর্ট কে বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সংগঠনের সদসদের নিয়ে আমরা ডেঙ্গু ও এডিস মশা নিধনে গ্রামে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করছি। নিজেরাও আক্রান্তের আশংকা থাকলেও এলাকাবাসীর স্বার্থে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্রাম থেকে এডিস মশা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের কাজ অব্যাহত রাখবে।
আড়িয়া ইঊনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আনছারী বিপ্লব দ্যা বিডি রিপোর্ট কে বলেন, তার ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে এডিস মশার আক্রমনের শিকার হয়েছেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক দিন রাত সেখানে কাজ করছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করতে গিয়ে নিজেও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন নিজে।
ঢাকা থেকে আসা মেডিকেল টিম
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে আড়িয়া ও খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে প্রতিদিনই পরিস্কার পরিচ্ছনতা অভিযান, এডিস মশা ও তার লার্ভা নিধনে ঔষধ স্প্রে এবং জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার দ্যা বিডি রিপোর্ট কে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও মশা নিধনে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করার পরও কেন এডিস মশা ও ডেঙ্গুতে রোগ নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না সে বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গ্রামবাসীকেও আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
উল্লেখ্য গত ২৪ ঘন্টায় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২০জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬৮জন। আর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮০৫ জন।
- আজ মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
- দৌলতপুরে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও শহীদ শেখ রাসেল স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শীতবস্ত্র বিতরণ
- কুষ্টিয়ায় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান শিক্ষককে হত্যার হুমকি
- কুষ্টিয়ায় গভীর নলকূপের তিনটি ট্রান্সমিটার চুরি
- কুষ্টিয়ায় ভেজাল কসমেটিকস তৈরীর কারখানা আবিষ্কার