কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে বৈদ্যুতিক খুটি অপসারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত

এনামুল হক রাসেল এনামুল হক রাসেল

সম্পাদক, দ্য বিডি রিপোর্ট ২৪ ডটকম

প্রকাশিত: ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ, মে ২৯, ২০১৯
Spread the love

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের ২৮ কি:মি: রাস্তার চলমান নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্তসহ রাস্তার মাঝখানে বিদ্যমান সচল বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারন না করায় জীবন ঝুঁকিতে চলাচল করছে যানবাহন ও যাত্রী সাধারণ। সড়ক বিভাগ বলছেন তিন বছর পূর্বেই সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু রাস্তার মাঝখানে এসব খুঁটি এখনও রয়ে গেছে। যে কোন সময় বড় কোন দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশও উপেক্ষিত। সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ ওজোপাডিকোর সকল খুঁটি অপসারন হয়েছে বলে দাবি করলেও কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এসব খুঁটি সরানোর কাজ চলছে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

সম্প্রসারিত মহাসড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটির সামনে থেকে ফেসবুক লাইভ করার পর সেটি অপসারণের জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন আলোচিত আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (১৪ফেব্রুয়ারী,২০১৯) এই আদেশ দেন।

খুঁটি অপসারণ বাস্তবায়নে আদেশের কপি প্রেরণ করা হয়- সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কুমারখালীর স্কুল শিক্ষক কেএমআর শাহীন জানান, এসব খুটি এখনও রাস্তার মাঝখানে থাকায় চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও যাত্রী সাধারণ। বড় কোন দুর্ঘটনার দায় নেবেন কে? এমন প্রশ্ন রেখে অবিলম্বে কুষ্টিয়ার চৌড়হাস থেকে যথাক্রমে লাহিনী, আলাউিিদ্দন নগর, কুমারখালী, জিলাপিতলা ও খোকসা পর্যন্ত শতাধিক এসব বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের দাবি স্থানীয়দের।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, আঞ্চলিক এই মহাসড়কটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সড়ক বিভাগ দ্রুততার সাথে ২০১৬ সালে শুরু হওয়া সম্প্রসারন ও নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু নির্মানাধীণ ২৮কি:মি:র মধ্যে দুটি সংস্থার প্রায় ৭ শতাধিক বৈদ্যুতিক খুটির অধিকাংশ পড়েছে রাস্তার মাঝখানে। বিষয়টি সুরাহার জন্য শুরুর থেকেই সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বিত সিদ্ধান্তও হয়েছে। কাজের অনুকুলে প্রাক্কলন ব্যয়ের সমুদয় আর্থিক বিষয়ও সুরাহা হয়েছে। ইতোমধ্যে রাস্তার অধিকাংশ জায়গায় বিটুমিন সারফেসের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। ব্যস্ততম এই সড়কে যানবাহনও চলছে, কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় রাস্তার মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোন সময় দুর্ঘটনার আশংকাও রয়েছে। ওজোপাডিকোর অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানালেও পল্লী বিদ্যুতের খুটিগুলি সম্পূর্নরূপে অপসারণে আরও তিন মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পবিস।

জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি যে সময় মারাত্মক জীবনজঝুঁকি কারণ হতে পারে এমন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ওজোপাডিকো লি: কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি সড়কের সকল ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটি অপসারণ পূর্বক নিরাপদ দুরত্বে স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে দাবি করেন নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম।

নির্মানাধীন এই আঞ্চলিক মহাসড়কের ২৮কি:মি:র মধ্যে স্থাপিত ১১ এবং ৩৩ কেভিসহ প্রায় সাড়ে ৬শ খুঁটি অপসারণের কাজ চলছে। এরমধ্যে রাস্তার মাঝখানে অতি ঝুঁকিপূর্ন ৬০/৭০ টি খুঁটি অপসারন করা হয়েছে। এখনও আরও বেশ কিছু খুঁটি রাস্তার মাঝখানে রয়ে গেছে। সেগুলিও দ্রুততার সাথে সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানালেন কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান।

আইনজীবী সমিতি কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আবু সাইদ বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় ও জনস্বার্থে বিভিন্ন সময় মহামান্য হাইকোর্ট বিচারিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতি। নির্দেশিত প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষ সে নির্দেশ প্রতিপালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। এর কোন ব্যত্যয় ঘটলে সেটা অবশ্যই আদালত অবমাননার সামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জনগুরুত্বপূর্ন সড়কের মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণে মহামান্য হাইকোর্টের বেধে দেয়া (৬০দিনের) সময় অতিবাহিত হলেও কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি মহাসড়কের মাঝখানে এখনও অসংখ্য গুরুত্বপূর্ন জায়গায় এসব খুটি অপসারিত হয়নি উল্লেখ করে এই অপরাধের দায়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সেটা ওজোপাডিকো বা পল্লী বিদ্যুৎ যেই হোক না কেন বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে তার বিরুদ্ধে আদালত ব্যবস্থা নিতে পারেন।

পাঠকের মতামতের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।