দুর্নীতি বিরোধী সাম্প্রতিক পদক্ষেপে আলোর ঝলকানি

এনামুল হক রাসেল এনামুল হক রাসেল

সম্পাদক, দ্য বিডি রিপোর্ট ২৪ ডটকম

প্রকাশিত: ১২:৩৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
Spread the love

সায়েদুল আরেফিন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি বিরোধী সাম্প্রতিক কঠোর মনোভাবের কারণে ত্যাগী দলীয় কর্মীরা এবার আশার আলো দেখছেন, সাধারণ মানুষের অন্তরের গহীনে বানের পানির মত ‘আশা-আনন্দের বান ডেকেছে’। যেমনটি দেখা গিয়েছিলো ১৯৬৯ আর ১৯৭০ সালে দেশ জুড়ে বঙ্গবন্ধুর কর্মকাণ্ডে। বঙ্গবন্ধু কন্যার দুর্নীতি বিরোধী সাম্প্রতিক পদক্ষেপে সাধারণ মানুষের হৃদয়ের অন্ধকার ঘরে হঠাৎ আলোর ঝলকানি দেখছেন তাঁরা।


ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বা আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে একাধিক দপ্তরের একদল অসৎ সরকারী কর্মচারী/ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী আর সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা মিলে সারা দেশে, বিশেষ করে বড় বড় শহর ও নগরীতে অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে সরকারের যেমন ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে তেমনি জনমনে বাড়ছে চরম ক্ষোভ আর দেশপ্রেমিক মানুষের হচ্ছে চরম হতাশ।


গত কাল ঢাকা শহরের কিছু এলাকায় ক্যাসিনো বা ক্লাবের নামে মদ জুয়ার আড্ডায় হানা দিয়ে র‍্যাব অবৈধ কাজে জড়িত থাকার দায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের একজন বড় নেতাসহ অনেককে আটক করেছে। এটা নিয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী সাহেব চরম ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক কথাই বলেছেন। যার অনেক কথারই যৌক্তিকতা আছে, দায় কারো একার না। উনার কিছু কিছু কথা পলিটিক্যাল।
অনুমোদন ছাড়া সারা দেশে ৬০ টার মত ক্যাসিনো আর ক্লাবের নামে মদ জুয়ার আড্ডার অনুমতি চেয়ে গত ৪ বছরে ৫৬টি রিট হয়েছে আদালতে। এদের পক্ষে কোন কোন বড় নামি উকিল কাজ করেছেন? কেন, বা কোন কারণে, কাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মহামান্য আদালত এসব মামলা নিষ্পত্তি বা খারিজ করতে দেরি করেছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিদ্যমান আইনে নিষেধ থাকার পরেও তবুও অনুমোদন ছাড়া ক্যাসিনো বা ক্লাবের নামে মদ জুয়ার আড্ডা কি করে একটা এলাকায় চলে বছরের পর বছর! এটা তো ওপেন সিক্রেট বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন। এখানে আমদানি করা মদ সরবরাহ করেন কারা, কোন সে ব্যবসায়ী! নারকোটিক্স বিভাগ কি ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন না কি তাদের কারো কারো বেনিফিট আছে এই কাজে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে বেনিফিশিয়ারী যারা তাঁদের স্বার্থ থাকার কারণেই এই অনুমোদন ছাড়া ক্লাব বা ক্যাসিনোর নামে মদ জুয়ার আড্ডা চলেছে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা কেউ বাধে না, কেন? জন অসন্তোষ দেখার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের উপরেও পড়ে তাদের একটা বড় অংশ এই অবৈধ বা ইচ্ছাকৃত ডিসপুটেড করা কাজে অবৈধ, অনৈতিক কাজে জড়িত। তার লক্ষিত ব্যবসার জন্য খুব উপযোগী কোন এলাকায় বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের অসৎ লোকের পদায়ন হয় এবং সেই ব্যবসা সম্পর্কিত দপ্তরে যদি কোন অসৎ লোকের সাথে কোন ব্যবসায়ীর পরিচয় থাকে তখন সেই এলাকার অসৎ রাজনীতিককে সাথে নিয়ে একটা বলয় তৈরি করে নেন। সামনে রাখা হয় রাজনীতিবিদকে।


এখানে একটা আংশিক প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গের অবতারণা করা যায়। মনে করি কোন এলাকায় একাটা সরকারী দপ্তরের কিছু জমি পতিত আছে। সেই সরকারী দপ্তরের মাঝারী বা বড় কোন অফিসার আর স্থানীয় পুলিশ ও একজন নামকরা উকিলের সাথে নিয়ে একটু লম্বা সরকারী ছুটির সময় রাতারাতি সেই সরকারী জমিতে বস্তি গড়ে ওঠে। বস্তি গড়ে ওঠার পরে সেখানে ওয়াসার অসৎ কর্মচারীর সাহায্যে পানির লাইন যায়, যায় গ্যাসের লাইন, বিদ্যুৎ লাইন, ইত্যাদি। মাসে মাসে যে টাকা ভাড়া ওঠে বস্তি থেকে সেই টাকার ভাগ পায় সংশ্লিষ্ট সবাই। এর কো-অডিনেটর থাকে মাঝারী স্তরের রাজনৈতিক নেতা। যে, বড় নেতার বিভিন্ন মিটিঙয়ে লোক সাপ্লাই দেয়। লাইন ম্যান বস্তির ভাড়া উঠায়। ক্ষমতার পালাবদল হলে বস্তির নেতাও বদল হয়, অনেক সময় নেতা দল বদল করে, বাকী সব টিক থাকে। বড় দুই নেতার ঝগড়া হলে বা কোন নেতার বেশি টাকার দরকার হলে বস্তিতে সর্ট সার্কিট হয়ে বা গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লেগে সব পুড়ে যায়। আবার নতুন করে ঘোর তোলার জায়গা বরাদ্দ হয়, নতুন টাকা আসে। উচ্ছেদের সরকারী চেষ্টা থামিয়ে দেওয়া হয় বড় উকিল দিয়ে আদালতে মামলা করে স্টে অর্ডার নিয়ে। বস্তিগুলোর মামলায় সাধারণত থাকেন ড. কামাল হোসেনের মত বড় উকিল যার জুনিয়রগন সবাই এখন বিচারপতি। কোন জটিল কেস এলে যাদের এমিকাস কিউরি করা লাগে। সেই কারণে এমন বড় উকিল সময়ের আবেদনের আবেদন দিলে বিচারক চক্ষু লজ্জার ভয়ে হলেও মামলার সময় বাড়িয়ে দেন। সেখানে বস্তি বাসিকে আলাদা টাকা গুনতে হয়। সব দোষ হয় রাজনীতিবিদদের, সরকার বিরোধী মিডিয়া মনের মাধুরী মিশিয়ে হিউম্যান স্টোরি করে, যাতে মানুষ শুধুই রাজনীতিবিদদের দোষ দেয়। তাঁরা তো বিজ্ঞাপনের নামে টাকা দেয় না, টাকা দেয় ব্যবসায়ীরা, আমলাদের নিয়ন্ত্রিত সরকারী, বেসরকারি দপ্তর। তখন খুব সহজেই পানি ঘোলা হয়ে যায়। এই ঘোলা পানিতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল ঢুকে যায় সিস্টেম লসের মধ্যে। এটাই খুব কমন চিত্র নগরীর।


গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ রাতের ঘটনার পরে এটা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে এখন খুবই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সরকার প্রধান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও দেশে চলমান দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে চান। ২০ তারিখের প্রথম প্রহরে এই লেখা যখন শেষ করি তখন জানা গেল যে, অনেক রথী মহারথী গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে আছেন। অনেক সাবেক মন্ত্রী লজ্জায় মুখ ঢেকে আছেন। কেউ কেউ যড়যন্ত্র করার পায়তারা করছে কি না জানা যায়নি।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা আগে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা সবাই তলে তলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো। এটা কিন্তু ১৯৭৫ সাল না, সেটা ভুলে গেলে চলবে না। শুধু পত্র পত্রিকা ছাড়াও আছে শক্তিশালী সোশ্যাল মিডিয়া যেখানে প্রধানমন্ত্রীর এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দল মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ খুব আশাবাদী আর খুশি। শুধু অখুশি হচ্ছে দুর্নীতিবাজ অসাধু আমলা, রাজনীতিবিদ ও অন্যান্য পেশাজীবীরা। সে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে যদি, প্রধানমন্ত্রী এই অভিযান ২/৩ মাস চালাতে পারেন, আর কিছু রাঘব বোয়াল গ্রেফতার হন; তাহলে দলীয় কর্মী বাদেও কোটি কোটি সাধারণ মানুষ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষায় প্রয়োজনে মাঠে নামবেন, জীবন বাজি রাখতেও রাজী।

সায়েদুল আরেফিন এর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া

পাঠকের মতামতের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।